ডেটিং অ্যাপ - ইতিকথা
আগের কিছু পোস্টে আমার ডেটিং অ্যাপের কিছু গল্প লিখেছিলাম। বেশ কিছুদিন ধরে মনে হচ্ছিলো, ওই তিনটে লেখার পর ওই নিয়ে আর কিছু না থাকাটা আকস্মিক নিস্তব্ধতার মতো লাগছে। একটা উপযুক্ত সমাপ্তিজনক লেখা চাই।
তাই আরেকটু লিখে রাখি।
আগের লেখাতে একজনের সাথে দেখা হওয়ার কথা বলে শেষ করেছিলাম। ওনার সাথে বেশ কয়েকদিন দেখা হলো, প্রায় এক মাসের মতো সময় ব্যাপী। তারপর দুজনেরই উৎসাহতে একটু একটু ঘাটতি হতে লাগলো, এবং অবশেষে দেখা করাও বন্ধ হলো।
ওনার পর আরেকজনের সাথে কথাবার্তা হয়ে দেখা হলো। এই দেখাসাক্ষাৎ প্রায় তিন-চার মাস চলেছিল। এই আলাপের শুরুর দিকে একটা জিনিস নিয়ে বেশ মজা পেয়েছিলাম - পুরো কলকাতা যখন গরমে হাঁসফাঁস করছে, বাইরে 'লু' বইছে, লোকজন বেরোচ্ছে না বাড়ি থেকে, সেই এপ্রিল-মে মাসে আমরা নির্বিকারভাবে রোদ্দুর থাকতে থাকতেই বেরিয়ে পড়তাম। ঘোরাটা অবশ্য পুরো শীততাপ নিয়ন্ত্রটিতে আবহাওয়াতেই হচ্ছিলো, গাড়িও এসি আর তারপর যেসব জায়গায় সময় কাটানো হতো সে জায়গাগুলোও এসি, তাও নিজের উৎসাহ দেখে নিজেই নিজের ওপর বেশ হেসে নিয়েছিলাম।
তবে এটাও একদিন শেষ হলো। নিজেদের মধ্যে সেই সহযাত্যভাবটা পুরোপুরি আসছিলো না, যেটার প্রয়োজন সময়টাকে নির্মল আনন্দময়ভাবে কাটানোর জন্যে। শেষের দিকে মনে হচ্ছিলো যে আমাদের দেখা করাটা কেমন যেন একটু গতানুগতিক হয়ে গেছে, একজন আরেকজনের সাথে দেখা করতে কোথাও যেন একটা 'কর্তব্য' করার হালকা ছোঁয়া লেগেছে। অগত্যা আমিই একদিন বলেছিলাম ডেটিংয়ের দাঁড়ি টানার কথা। আর বলে, অপরপক্ষের প্রতিক্রিয়াতে ভারী দমেও গেছিলাম। নির্বিকারভাবে মাথা হেলিয়ে স্রেফ বলে দিলো "আচ্ছা"!! যাহ বাবা! একবার জিজ্ঞাসাও করলো না কেন। একটু খারাপ তো লাগতে পারতো রে বাবা, সেটা অভিনয় করেই হোক না কেন। একটু মুখ বেজার করে "আর দেখা করবো না?" বললে কি আকাশ ভেঙে পড়তো? কিস্সু না। যত্ত সব!
এটা লিখতে লিখতে, ওর কথা যখন ভাবছি, মনে হচ্ছে ওকে নিয়ে আরো দুটো কথা লিখি। ও নিজের সম্মন্ধে একটু একটু করে যা বলেছিলো, তার থেকে পরিস্ফুট হয়ে উঠেছিল গত কয়েক বছর ধরে ও যে কঠিন সংকটের মধ্যে দিয়ে গেছে, এবং এখনও যাচ্ছে, তার ছবি। সেরকম সংকট যেটা আমাদের নিজেদের মস্তিষ্কের চিন্তাধারা দিয়ে তৈরী নয়, যে সংকট বহির্জগৎ ধাক্কা দিয়ে আমাদের জীবনে এনে দেয়, যে সংকট অপ্রয়োজনীয় ভাবনার বাহুল্য আমাদের থেকে কেড়ে নেয়। গত কয়েক বছর ধরে সেরম কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে চলেছে ও। এবং জানি, যতদিন প্রয়োজন, করেও যাবে, সেই ক্ষমতা ওর আছে।
ওর কথা শুনতে শুনতে মনে হতো, আমার নিজের জীবন তো রূপকথা!
একটা ছোট্ট স্মৃতির কথা বলি - একদিন ওর জীবনের একটা ঘটনা শোনার পর, যখন আমি স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলাম, ও জিগেশ করেছিল "কি ভাবছো - একটাই মানুষের মধ্যে এতো তিক্ততা কিভাবে থাকতে পারে?" - শুনে আমি শুধু অস্ফূট বলেছিলাম "না"। আমি তখন স্তব্ধ বিস্ময়ে ভাবছিলাম, একটা মানুষের মধ্যে সম্পূর্ণ একা এতো কিছু সহ্য করার ক্ষমতা কিভাবে থাকতে পারে। আর শুধু সহ্যই নয়, যথাযত উত্তরও দিয়ে গিয়েছে ও, নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী।
বহুবার মনে হয়েছে ওর জন্যে কিছু একটা করতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু ওকে দেবার মতো সেরম কিছুই তো নেই আমার কাছে। কিচ্ছু না। কোথায় সেই আলাদিনের প্রদীপ?
ওর কথা আরো লিখতে পারলে ভালো লাগতো, কিন্তু সেই গল্প বলার অধিকার তো আমার নেই, সেটা একমাত্র ওরই আছে। আমি শুধু আমার পক্ষের কথা, আমার অনুভূতির কথাটা, লিখতে পারি, তাই এইটুকুই শুধু লিখছি।
আবার মূল প্রসঙ্গে ফেরত এসে লেখাটা শেষ করি। ওর সাথে দেখাসাক্ষাৎ শেষ হবার পর (আলাপ পরিচিতির শেষ নয়, আলাপ রয়েছে) আরো কয়েকজনের সাথে কথা হয়েছিল, অ্যাপের বাইরে এসে হোয়াটসঅ্যাপে কথা, আর ভয়েস কলও হয়েছিল, কিন্তু সামনাসামনি দেখা হওয়াতে রূপান্তরিত করা হয়নি আর। আসলে ততদিনে আমার নিজের উৎসাহতেও একটু খামতি এসে গিয়েছিলো। ইদানিং সব মোটামুটি চুপচাপ।
আর এই কথাতেই শেষ করলাম আমার আজকের এই গল্পও।
Comments
Post a Comment